ঢাকামঙ্গলবার , ১৬ জানুয়ারি ২০২৪
  1. অর্থনীতি
  2. আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আরো
  5. খেলার খবর
  6. গণমাধ্যম
  7. চাকরির খবর
  8. জাতীয়
  9. দেশের খবর
  10. ধর্ম পাতা
  11. পরিবেশ
  12. প্রবাস
  13. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  14. বিজ্ঞান প্রযুক্তি
  15. বিনোদন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সিওমেকের `নাটেরগুরু` নার্স সাদেক

rising sylhet
rising sylhet
জানুয়ারি ১৬, ২০২৪ ৯:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ads

সিওমেকের `নাটেরগুরু` নার্স সাদেক ।

সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিওমেকের কর্মচারী নিয়োগ থেকে পেনশন প্রদান, শুরু থেকে শেষের সবটাই চলে একক অধিপতি সিনিয়র স্টাফ নার্স পদবীধারী ইসরাইল আলী সাদেকের হুকুমে। আরও নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়ালিতে জড়িয়ে যাছে সাদেকের নাম। তার নেতৃত্বেই ওসমানী হাসপাতালে গড়ে ওঠেছে ক্ষমতাধর এক সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটের হর্তাকর্তা-বিধাতা এই সাদেক।

জানা যায়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তার গড়ে তোলা সাম্রাজ্যে কৌশলে নিজের মতো নিয়ম তৈরী করেছেন ওসমানী হাসপাতালের স্টাফ নার্স বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বি.এন.এ) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক। নার্সদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে সার্জারি ওয়ার্ডসহ প্রতি ওয়ার্ড থেকে তাদের মাধ্যমে সপ্তাহিক ও মাসোহারা আদায় করে থাকেন তিনি।

ভোক্তভোগী নার্সদের কয়েকজন জানান, নার্স হয়েও কর্মকর্তার দাপট খাটিয়ে চলেন সাদেক। এমনটি সুন্দরী নার্সদের দিকে লুলুপ দৃষ্টি থাকে তার এবং আমিনুল ও সুমন চন্দ্র দেবের। তাদের কথায় রাজি না হলে মাসের পর মাস নাইট ডিউটি ধরিয়ে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে একজন ইজারাদার কীভাবে ইজারা নিয়ে এ ফার্মেসি পরিচালনা করে তা সবার কাছেই পরিষ্কার। তাছাড়া সাদেক মূলত একটা সিন্ডিকেট করে অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছে। ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি ভয়াবহ আরেক তথ্য উঠে এসেছে সাদেকের বিরুদ্ধে। বর্তমান পরিচালককে বগলদাবা করতে না পারায় নার্সদের দিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনিয়ম করিয়ে থাকেন, যাতে হাসপাতালের চিকিৎসা অবহেলার বদনাম হয়। আর একারণে সাম্প্রতিক সময়ে ওসমানী হাসপাতালে রোগির মৃত্যু বেড়েই চলেছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমান পরিচালক মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে পোষাক পরেই কর্মস্থলে আসতে হয়। বিষয়টি গাত্রদাহ হয় ইসরাইল আলী ছাদেকের। তাই ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার দৈন্যতা দেখাতে চিকিৎসকদের কম অনুপস্থিতির কারণে দায়িত্বে থাকা নার্সরা প্রতিনিয়ত চিকিৎসা গাফিলতি করেন। যে কারণে বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানে হাসপাতালের রোগির মৃত্যু বেড়ে গেছে। গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় চিকিৎসাধীন ২ হাজার ১৬৯ রোগির ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। একইভাগে গত ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন রোগির মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। গত ১০ ডিসেম্বর ২৪ জন এবং ১৪ ডিসেম্বর সর্বাধিক ৩১ জন রোগির মৃত্যু হয়।

আর মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গত শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) শিশু ওয়ার্ডে। এক রাতে ৩ ঘন্টার ব্যবধানে ৭ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার জন্য কর্তব্যরত নার্সদের দায়ি করেছেন অভিভাবকরা।

ভোক্তভোগী সিলেটের ওসমানীনগরের বাসিন্দা সালমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তামিম নামে তার ভাইয়ে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার ভাতিজাসহ সেদিন ৩ ঘন্টার ব্যবধানে ৭টি শিশুর মৃত্যু দেখেছেন তিনি। তার রোগীর শরীর বেশি খারাপ হওয়াতে নার্সকে ডেকেছেন বেশ কয়েকবার, কিন্তু সাড়া দেননি কেউ। উপরন্তু আনসার দিয়ে তাকে ধমক দেওয়া হয় বিরক্ত না করতে। এক পর্যায়ে তার শিশু রোগির নাক থেকে নল খুলে আরেক শিশুকে দিতে গেলে নিমিষেই তার ভাইয়ের ছেলের মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, নার্সদের ডাকলেও তারা কথা শুনে না। ৫ মিনিটের কথা বলে আধা ঘন্টা দেরি করেন। বেশি বিরক্ত করলে আনসার দিয়ে নির্যাতন করা হয়। রোগির অবস্থা যতই গুরুতর থাকুক ওয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়।

বিগত দিনে দায়িত্বে থাকা হাসপাতাল পরিচালকদের বগলদাবা করে রেখেছিলেন ইসরাইল আলী সাদেক। পেশায় নার্স হলেও কখনো নার্সের পোষাক পরতে হয়নি তাকে। হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া দায়িত্বে আসার পর তাকে আর বগলদাবা করে রাখতে পারেননি সাদেক। যে কারণে নার্সের পোষাক পরে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে তাকে।

অর্থপ্যাডিক বিভাগের হাড়ের অপারেশনে ব্যবহৃত ইমপ্ল্যান্ট তথা ধাতু দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের পাত, তার, স্ক্রু, বল ইত্যাদি অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে বিক্রি করেই কোটিপতি বনে যান সাদেক। ছিল ৩০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতাল অভ্যন্তরে ফার্মেসী ব্যবসা। তার ফার্মেসী থেকে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রাংশ না কিনলে রোগির অপারেশন হতো না। তাঁর পাতানো ফাঁদে অসহায় ছিলেন সাধারণ রোগীরা। শুধু রোগীই নয়, হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স থেকে শুরু করে নবাগত নার্সরাও ইসরাইল আলী সাদেকের কাছে জিম্মি। অনুসন্ধানে উঠে আসে এসব তথ্য।

মঙ্গলবার এক সিনিয়র নার্সের ৩৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ওয়্যারবিল উত্তোলন থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। এই ঘুষের টাকা তার নিতে গিয়ে ধরা পড়েন সাদেকের সহযোগী আমিনুল ও সুমন দেব। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে ৩ জনের বিরুদ্ধে।

এসব ঘটনায় বরখাস্ত হতে পারেন সাদেকসহ অভিযুক্ত তিনজন। এ ব্যপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাতেনাতে ঘুষের অর্থসহ দুজন গ্রেপ্তার হওয়ার পর জড়িত হিসেবে সাদেকের নামও উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানিয়ভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করতে পারে না। যে কারণে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাদেক সহ অভিযুক্ত তিনজনকে বরখাস্তের সুপারিশ করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর বরাবরে চিঠি দিচ্ছে।

সাদেকের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ তবুও ভোক্তভোগী নার্সরা সাদেকের বিরুদ্ধে মুখ খুলেন না মন্ত্রী-এমপিসহ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার সখ্যতার কারণে। তাই রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ের কারণে পলাতক থাকা সাদেক মামলা থেকেও রেহাই পেয়ে যেতে পারেন।

এরআগে করোনাকালে তার কথা না শোনায় এক ঘন্টার জন্য করোনা ভ্যাকসিন প্রদান বন্ধ করে দেন সাদেক। পরে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ধামকিতে তার সুর নরম হয় এবং কর্মে থাকা নার্সদের ফের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বলেন সাদেক।

এর আগে ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর রাত ৯টা ২০ মিনিটের সময় মোগলাবাজার থানাধীন আলমপুর এলাকা থেকে ইসরাইল আলী সাদেক ও নগরীর উত্তর বালুচর এলাকার বাসিন্দা মৃত দৌলত আহমদের ছেলে ওমর ফারুককে ১০পিস প্যাথেডিনসহ আটক করে র্যাব। ঘটনার সময় তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কারও জব্দ করা হয়। এরপর ৪ অক্টোবর সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে তাদেরকে মোগলাবাজার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর ধারা ৩১ (১) ও ৮ (খ) অনুযায়ী বিক্রয়ের উদ্দেশ্য প্যাথিড্রিন বহনের কথা উল্লেখ করে র্যাব-৯ এর এসআই মো. আব্দুল মালিক বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-৪(১০)’১৯) দায়ের করেন। পরে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২য় এর বিচারক মামুনুর রহমান তার অন্তর্র্বতীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। ওই ঘটনার পরও তাকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়নি। উপরন্তু জেল খেটে বেরিয়ে মামলা মাথায় নিয়েও চাকুরী করছে অদ্যাবধি।

বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দাপট খাটিয়ে চলেছেন অন্যভাবে। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা তার কথার বাইরে যান না কোনো নার্স। আর তার ডানে বামে দুই হাতিয়ার স্বরূপ ছিলেন ঘুষের অর্থসহ গ্রেপ্তার সিনিয়র নার্স আমিনুল ও সুমন চন্দ্র দেব।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।