ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে।
যে পথে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীদের হাসপাতালে আনতে সময় লাগতো এক ঘণ্টা, আজ সেই পথে অবরোধের কারণে রোগী আনতে সময় লেগেছে ৬ ঘণ্টা! এতে রোগীরা দ্রুত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ঢাকা মেডিকেলে অবস্থান করা অনেক অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, অবরোধের কারণে খালি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতালে আসার পথে অনেকে বাধা দিচ্ছে। খালি অ্যাম্বুলেন্স যেতে দিচ্ছে না। চালকরা জানান, আমরা তো রোগী পৌঁছে দিয়ে আবার হাসপাতালে ফিরে আসছি, তাহলে কেন আমাদের অ্যাম্বুলেন্স আটকে দিচ্ছে? তবে শিক্ষার্থীরা রোগী বহন করা অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও তেমন লাভ নেই। জায়গায় জায়গায় যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে রাস্তায় আটকে থাকতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে সড়কে এতটাই যানজট লেগে আছে যে, অ্যাম্বুলেন্স পেছনে বা সামনে নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশ মুখেই শিক্ষার্থীদের অবস্থান চানখারপুল মোড়, শাহবাগ মোড় ও গুলিস্তানসহ আরও অনেক জায়গায়।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল এবং সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করার দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছেনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সড়কের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা রাজধানীর মহাখালী, বনানী ও কারওয়ান বাজার এলাকায় রেললাইন অবরোধ করে রেখেছেন। এ কারণে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি যানবাহনও আটকে পড়েছে। এসব কারণে হাসপাতালগামী রোগীদের সড়কে আটকে থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে রোগীরা সড়কে অবস্থানের পর এক পর্যায়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীদের নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্স চালক ও তাদের স্বজনরা এই সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
কুমিল্লার দাউদকান্দির একটি গ্রাম থেকে মাথায় রক্তক্ষরণের কারণে মজনু মিয়া (৬৫) নামে এক রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে শিক্ষার্থীদের অবরোধ পেরিয়ে হাসপাতালে আনতে সময় লেগেছে ৬ ঘণ্টার মতো। অ্যাম্বুলেন্স চালক ও রোগীর স্বজনরা বলছেন, সাধারণ দিনে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে সর্বোচ্চ সময় লাগতো এক থেকে দেড় ঘণ্টা।
অ্যাম্বুলেন্স চালক মাইনুদ্দিন বলেন, দাউদকান্দি থেকে সকালে রোগী নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেই। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে পৌঁছাতে পারিনি। কাঁচপুর এলাকায় অবরোধের কারণে আটকে থাকি। পরে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে অনেক ঘুরে গুলিস্তান হয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পৌঁছাতে লেগেছে ৬ ঘণ্টার মতো। অথচ সাধারণ দিনে সর্বোচ্চ সময় লাগত এক থেকে দেড় ঘণ্টা।
রোগী মজনু মিয়ার ভাই জালাল মিয়া জানান, তার ভাই ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। তার দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দরকার অথচ অবরোধের কারণে সড়কেই চলে গেল ৬ ঘণ্টা!
রাজধানীর জুরাইনের চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকা থেকে মাথায় পুরনো আঘাতজনিত কারণে পারভেজ (২৫) নামে এক রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসতে দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। আদ দ্বীন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের চালক শহিদুল ইসলাম সুমন জানান, জুরাইন থেকে মাত্র আধা ঘণ্টা সময় লাগতো হাসপাতালে পৌঁছাতে। এই অবরোধের কারণে হানিফ ফ্লাইওভার উঠতে না পেরে অনেক ঘুরে অনেক পরিশ্রম করে হাসপাতালে রোগীকে আনতে দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল ১০টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে টিকিট বিক্রির সংখ্যা অনেক কম।