দুই ভাই ছিলেন সরকারি আমলা। কোন দলের রাজনীতিতে ছিলেন না সক্রিয়। এমনকি কোন দলের কর্মীও ছিলেন না কোন কালে। যদিও ছোট ভাই মোমেন বলতেন তিনি কমিনিস্ট্রের (ন্যাপ) রাজনীতি করতেন। তবে সিলেটের রাজনীতির মাঠে ছিলেন না কোন সময়। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রয়াত বড় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিত হয়ে যান সিলেট-১ আসনের এমপি। পেয়ে যান অর্থমন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব। টানা দুইবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেন মুহিত। সে সময় দেশ থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা পাচার হলেও এ নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিতেন তিনি। অথচ বিষয়টি দেখাভাল করার দায়িত্ব ছিলো তার মন্ত্রনালয়ে অর্ন্তভুক্ত। এসব নিয়ে সাংবাদিক কোন প্রশ্ন করলে বগাস-রাবিশ বলে তুচ্চ্য-তাচ্ছিল্য করতেন সব সময়। তখন ছোট ভাই মোমেন বিদেশে সরকারি আমলা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় বড় ভাইয়ের হয়ে কাজ করতে ছোট ভাই মোমেন। বিগত ২১ আগস্ট ২০১৭ চীনের বেইজিংয়ে ‘ওয়ান রোড ওয়ান বেল্ট’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত অর্থমন্ত্রীর যোগদানের কথা।
কিন্তু আয়োজকদের কাছে বেইজিং সফরে ছেলে মেয়ের জন্য বিমানের টিকেটসহ সুযোগ সুবিধা চেয়ে বসেন তিনি। বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি আয়োজক কর্তৃপক্ষ লন্ডন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউরোমানি। বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিবেদক ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা দ্যা এশিয়ান এইজ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। বাতিল হয়ে যায় অর্থমন্ত্রী আবুল মালের বিদেশ মিশন। সে সময় তিনি ১শত কোটি টাকা মানহানি মামলার হুমকি দিয়ে উকিল নোটিশ প্রেরন করে ছিলেন পত্রিকা অফিসে। বিশেষ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে ছিলেন এ প্রতিবেদকের পিছনে। সে সময় থেকে চায়নার বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে আবুল মাল মুহিত পরিবারে সখ্যতা থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। হঠাৎ করে সামনে নির্বাচন আসে। ভাই আবুল মাল মাল আব্দুল মুহিতকে এক রাতে জিম্মী করে আমেরিকা থেকে দেশে আসা মোমেন এমপি হতে চান। এনিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্ধ সৃষ্টি হলে রাতে ছুটে যান তৎকালিন জেলা প্রশাসক, কোতয়ালী থানার ওসি, ও সাবেক সিসিক মেয়র। রাত ভর আলোচনার মুহিত সম্মতি দিতে বাধ্য হন। ভাইয়ের সুপারিশে সে সময় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাশকতা মামলায় আত্মগোপনে থাকা ড.এ.কে আব্দুল মোমেন। ভাগ্য চক্রে হয়ে যান সিলেট ১ আসনের সংসদ সদস্য। বিদেশে কর্মরত থাকার সুবাধে ও ভাই আবুল মালের সুপারিশে শেখ হাসিনার দয়ায় হয়ে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি মন্ত্রী হলেও সর্বময় ক্ষমতার মালিক ছিলেন কুমিল্লার মেয়ে সুন্দরী স্ত্রী সেলিনা মোমেন। মন্ত্রনালয় নয় যেনো আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান সেলিনা। রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক হয়ে যান সেলিনা মোমেন। সিলেট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েলের সম্পাদিত একটি বই থেকে স্পষ্ট প্রমানিত হয় সিলেট ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল মুহিত ও ভাই ড.এ.কে মোমেনের পিতা ছিলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধের সময়ে গঠিত শান্তি কমিটি সিলেট সদর উপজেলার সভাপতি আ.আ.ম.আব্দুল হাফিজ। অথচ যারা রাজাকার-রাজাকার বলে চিৎকার করেছে। তাদের ঘরেই ছিলো সিলেটের অন্যতম এক রাজাকার পরিবারে এই দুই সন্তান। মন্ত্রী হওয়ার পর মোমেন সিলেটের একটি অনুষ্ঠানে স্ত্রী সেলিনা মোমেনকে পরিচয় করিয়ে বলে ছিলেন ‘তিনি আমার বস’। কিন্তু চতুর মন্ত্রীর এই ঘোষণার তাৎপর্য তখন কেউ না বুঝলে পারলেও হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে ছিলেন সিলেটের সকল সরকারি অফিসারগণ। ক্ষমতা পেয়ে সেলিনাকে সিলেট-১ আসনের ছোট খাটো টিআর,কাবিখা থেকে শুরু করে সকল প্রজেক্টের ২৫% কমিশনের মালিক হয়ে ওঠেন। টাকাগুলো সহজে হজম করতে গড়ে তুলেন সেলিনা-মোমেন ফাউন্ডেশন। সদর উপজেলার সবগুলো প্রকল্প যার হাত দিয়ে বাস্তবায়িত হয় সেই প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন অফিসার বা পিআইও পদে তিনি নিয়ে আসেন হিরন মাহমুদকে। হিরনের বাড়ি সেলিনার নিজ জেলা কুমিল্লায়। পোস্টিং দেয়ার আগে হিরনকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে ৩ দিন রাখেন সেলিনা। কি ভাবে সরকারী সমস্ত বরাদ্দের একটি অংশ তিনি পেতে পারেন সেই কলাকৌশলের একটি ছক হিরনকে নিয়ে তৈরি করেন। ছক বাস্তবায়নের জন্য মিশনে যুক্ত করা হয় আরো দুজনকে। তারা হলেন, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের এপিএস শফিউল আলম জুয়েল এবং বিতর্কিত মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সিলেট মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামলায় পালাতক হেলেন আহমেদকে। এই হেলেন আহমদ সিলেটে একজন ভূমিদস্যু হিসাবে পরিচিত। প্রতিটি সরকারী প্রকল্পের কাজ দেয়ার সময় ঠিকাদারকে শর্ত দেয়া হতো চেক নেয়ার সময় বিলের ২৫ শতাংশ ম্যাডামের জন্য নগদে পরিশোধ করতে হবে। এই শর্তে যারা রাজি হতেন তারাই কাজের ঠিকাদারি পেতেন। এই ২৫ শতাংশের টাকা নগদে গ্রহণ করতেন পিআইও হিরন মাহমুদ। হিরন মাহমুদের কাছ থেকে হিসেব বুঝে নিয়ে সেলিনার কাছে পৌঁছে দিতেন জুয়েল ও হেলেন আহমদ। কাজের আগেই বাধ্য হয়ে বিলের ২৫ শতাংশ ‘ম্যাডামের’ জন্য নগদে আগাম পরিশোধ করতে হতো। পরে নিম্নমানের কাজ আর প্রকল্প অসমাপ্ত রেখেই তা পুষিয়ে নিতে হতো ঠিকাদারকে। যেহেতু পিআইও নিজে এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত, তাই প্রকল্প না করলেও থেমন সমস্যা হতোনা। এছাড়া, গত ৬ বছরে টিআর/কাবিখার হাজার হাজার ভূয়া প্রকল্প তৈরি করে সমুদয় টাকা আত্মসাত করেছে এই সেলিনা সিন্ডিকেট। পিআইও হিরন মাহমুদ প্রকল্পের কাগজপত্র তৈরি এবং তা বাস্তবায়নের রিপোর্ট দিয়ে টাকা উত্তোলন করতেন। সেই টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা হতো সেলিনা, জুয়েল, হিরন মাহমুদ এবং হেলেনের মধ্যে। সেলিনার নির্দেশে এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের অনুমোদন দিয়ে গেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। শুরুতে কিছুটা প্রতিবাদ করতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ পড়েছিলেন তোপের মুখে। পরে তিনিও নিরবে তা অনুমোদন করে গেছেন। স্বামীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি ছিলো সেলিনা মোমেনের কাছে টাকার গাছ। টানা পাঁচ বছর সে গাছ থেকে ইচ্ছেমত টাকা পেড়ে বিদেশে পাচার করেছেন সেলিনা। টাকা পাচারের অন্যতম সুযোগ ছিলো বিদেশে রাষ্ট্রীয় সফর।
প্রতিমাসে মন্ত্রীর অন্তত একটি বিদেশ সফর থাকতো। আর প্রতিটি সফরে মন্ত্রীর অপরিহার্য সফরসঙ্গী থাকতেন স্ত্রী সেলিনা মোমেন। মন্ত্রীর সফর সঙ্গীর নামে প্রতিটি সফরে ৮/১০ জনকে সাথে করে নিয়ে যেতেন সেলিনা। তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০/১৫ লাখ টাকা করে আদায় করতেন। মন্ত্রণালয়ের প্যাডে বিশেষ রিকুয়েষ্ট লেটার ইস্যু করে তাদের ভিসা করিয়ে নিতেন সহজে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মন্ত্রী মোমেনের বেশ কয়েকবার বাক-বিতন্ডা হয়। আদম পাচারের বানিজ্যে খদ্দের যোগাড় করে দিতেন মন্ত্রীর এপিএস জুয়েল, বিতর্কিত মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেন এবং সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিরন মিয়া। মন্ত্রনালয়ের রিকুয়েষ্ট লেটারে ভিসা করালেও বিতর্ক এড়াতে তাদেরকে সাথে না নিয়ে ভিন্ন ফ্লাইটে বিদেশ পাঠাতেন মোমেন-সেলিনা। মোমেন বাহিরে ছিলেন সাচ্চা মানুষ। নিজে সরাসরি দুর্নীতি না করলেও ঘুরিয়ে ঠিকই টাকার-সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ঘুষ-কমিশন সবই খেয়েছেন। কমিশন আর ঘুষের টাকায় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয়েছে রিষ্টপুষ্ট। ভূক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন কোনো সেক্টর নেই যেখান থেকে সেলিনা মোমেন কমিশন নেননি। সিলেটে উন্নয়ন প্রকল্প মানেই ছিল তার একটি নির্দিষ্ট হারে কমিশন। বিশেষ করে বিদেশি কোম্পানির জন্য দেশে উন্নয়ন কাজ পাইয়ে দিতে তদবির বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মোমেন। তবে তিনি কাউকে বিশ্বাস করতেন না। নিজের হাতে সব ঘুষ বা কমিশনের টাকা গ্রহণ না করলেও তার ক্যাশিয়ার ছিলেন নিজের স্ত্রী। যে কোন তদবিরের জন্য প্রথমে ধরনা দিতে হতো স্ত্রীর অন্দর মহলে। কমিশন বাণিজ্য হতো তার মাধ্যমেই।
সিলেটে বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। অভিযোগ আছে, স্ত্রী সেলিনা মোমেন সিলেট পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতি মাসে ৩০ লক্ষাধিক টাকা কমিশন নিতেন। পাসপোর্ট অফিসের টোকেন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সোর্সকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতির যে রাজত্ব্য তৈরি করা হয়েছিল তার হিসাব প্রতি মাসে নিতেন সেলিনা। চোরাচালানির রুট হিসেবে ব্যবহারের জন্য সিলেট এয়ারপোর্ট থেকেও আসত একটি অংশ। সবসময় তাকে রাজি ও খুশি রাখতেন সিলেট এয়ারপোর্টের কর্তারা। সিলেট এয়ারপোর্ট থেকে কোম্পানিগঞ্জ রাস্তায় ৫৬০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে একাধিক সূত্র থেকে। আর এই কাজটি করেছেন মোমেন ও তার স্ত্রী দুজনে মিলেই। নিজের স্বামীর হয়ে সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাসেল হাসান ও জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন করেন সেলিনা মোমেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন বরাদ্দ আনতে হতো তাকে ছুঁয়ে। সব কাজেরই কমিশন পেতেন তিনি। এমনকি চিনি চোরাচালান থেকেও তাকে মাসে একটি ভাগ দেওয়া হতো। যা বণ্টন করতেন সাবেক জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন নিজেই। তিনিই ড. মোমেনের ভাগ তার কাছে পৌঁছে দিতেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর ঢাকা-সিলেট চারলেন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতে চায়না কোম্পানির কাছ থেকে ১৫০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ.কে আব্দুল মোমেন। কার্টুন ভর্তি চায়ের প্যাকেটে করে মোমেনের বাসায় টাকাগুলো পাঠিয়েছিলো ঠিকাধারী প্রতিষ্টান ঐ চায়না কোম্পানি। সেই টাকার ভাগ না পেয়ে বেকে বসেন সড়ক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যে কারণে বছরের পর বছর আটকে থাকে বহুল আলোচিত প্রকল্পটি। এর আগে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোমেনের ঘুষ নেয়ার তথ্য ফাঁস করেছিলেন খোদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। তখন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়েছিলো ঘুষ নয় বরং লবিং চার্জ হিসেবে এ টাকা নিয়েছেন তিনি। বিনা ভোটের এই এমপি আর ভাইয়ের কোঠায় মন্ত্রী মোমেন পাঁচ বছরে দেশ কিংবা সিলেটের জন্য কিছু করতে না পারলেও তার স্ত্রী সেলিনা মোমেনকে শত শত কোটি টাকার মালিক বানিয়েছেন। জুলাই বিপ্লবের আগে সেলিনা আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন। স্বামী মোমেন কিন্তু এখনও দেশে আত্মগোপন করে আছেন।
বিদেশী কোম্পানির জন্য তদবির বানিজ্যে বেপরোয়া ছিলেন ড. এ.কে আবদুল মোমেন। ঢাকা-সিলেট চারলেন প্রকল্পের জন্য চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কাছ থেকে নেয়া ১৫০ কোটি টাকা হজম করতে অস্থির ছিলেন এই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ মহলে দফায় দফায় ধর্না দিয়েছেন। কোন ভাবেই যাতে চায়না কোম্পানির কন্ট্রাক্ট বাতিল না হয়। সেজন্য তিনি দফায় দফায় কনফিডেনসিয়াল চিঠি লিখেছেন সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে। ড.এ.কে আব্দুল মোমেন এর লুটপাট, দুর্নীতির শুরু এমপি-মন্ত্রী হওয়ার আগ থেকেই। তার ভাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের শেষ মেয়াদে আমেরিকা থেকে দেশে ফেরেন মোমেন। সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করার টার্গেটে মাঠে কাজ শুরু করেন। এ প্রয়াত অর্থমন্ত্রী মুহিত তার রাষ্ট্রীয় কাজের ব্যস্ততার জন্য সিলেটের উন্নয়ন কাজ তদারকি করতে ছোটভাই মোমেনকে বিশেষ দায়িত্ব দেন। আর এই সুযোগকে টাকা বানানোর ধান্দায় উপযুক্ত ব্যবহার করেন মোমেন ও তার স্ত্রী সেলিনা। এ সময়ে ঢাকা-সিলেট চারলেন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতে চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে অসাধু ডিল শুরু করেন ড. মোমেন। বিশাল অংকের ঘুর্ষে শর্তে অবিশ্বাস্য নির্মান ব্যায়ে কোম্পানিটিকে কাজ পাইয়ে দেন মোমেন। আপন বড় ভাই অর্থমন্ত্রী এবং একনেক এর বিকল্প চেয়ারম্যান হওয়ায় ডিলটি তার জন্য বেশ সহজ ছিলো। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম অবিশ্বাস্য নির্মানব্যায়ে (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮১ কোটি টাকা) এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সর্বমোট ব্যায় ধরা হয়েছিলো ১৭ হাজার কোটি টাকা।
ঢাকায় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের দিনই ঘুষের টাকার পার্ট পেমেন্ট হিসেবে ১৫০ কোটি টাকা মোমেনের বাসায় পাঠায় চায়না কোম্পানিটি। ভাগ না পেয়ে ক্ষিপ্ত ওবায়দুল কাদের অর্থমন্ত্রী মুহিতের কাছে নালিশ করেন। মুহিত তৎক্ষনাৎ ডেকে পাঠান মোমেনকে। জিজ্ঞেস করেন ‘চায়না হার্বার কোম্পানি তোমার বাসায় কি পাঠিয়েছে ?’ সুচতুর মোমেন জবাব দেন, কোম্পানিটি গিফট হিসেবে একটি বড় কার্টুনে করে চা পাতা পাঠিয়েছে তার জন্য। পরে গোয়েন্দা রিপোর্টে সরকার জানতে পারে সেই কার্টুনে করে ঘুষের পার্ট পেমেন্ট ১৫০ কোটি টাকা মোমেনকে পাঠিয়েছিলো কোম্পানিটি। এরপর চায়না কোম্পানির সঙ্গে সরকারের ডিল থমকে যায়। গত ৫ আগষ্টের আগেই সেলিনা মোমেন দেশ ছেড়ে আমেরিকা পালিয়ে যান। স্বামী মোমেন এখনোও দেশে আত্মগোপন করে আছেন। অনেকে রসাত্ব্যক করে বলছেন, ভাঙ্গিলো আদরের জোড়া কোজন বাদি হইয়া। মোমেন সিন্ডিকেটের অপর সদস্য হেলেন আহমদও এখন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
অপর দিকে, ভাগ্নি জামাই হিসাবে পরিচিত ড. আহমদ আল কবির উরফে সীমান্তিক কবিরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে এনজিওর নামে যে সব টাকা আসতো সে সব টাকায় ভাগ বসাতেন সেলিনা-মোমেন। বিনিময়ে কবিরকে সব রকম সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতেন মোমেন ও সেলিনা।