শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে ৪৫ দিনেও কমানো হয়নি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা।
ঐ সময় শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য বলেছিলেন খুব শীগ্রই বসে সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি কমানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ৪৫ দিন অতিক্রম হয়ে গেলেও কোনো কার্যকরী সিদ্ধান্ত দেখতে পায়নি শিক্ষার্থীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখে সেমিস্টারে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে সেমিস্টার ফি নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৩৪৫ টাকা। যা এক বছর আগেও ছিল ২ হাজার ৪৩০ টাকা। এক বছরের ব্যাবধানে ৯১৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেমিস্টার ফির পাশাপাশি বৃদ্ধি করা হয়ে ক্রেডিট ফিও। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত তত্ত্বীয় প্রতি ক্রেডিটের মূল্য ছিল ১০৫ টাকা। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রতি তত্ত্বীয় ক্রেডিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪০ টাকা। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক প্রতি ক্রেডিটের মূল্য ছিল ১৬০ টাকা। সেটি যথাক্রমে বৃদ্ধি করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি বছর এরকম লাগামহীন সেমিস্টার ফি ও ক্রেডিট ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সকল ধরনের অযৌক্তিক ফি কমানোর দাবিতে মানববন্ধন ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তারা।
এমনকি কার্যক্রম নেই কিংবা সেবা পাচ্ছে না এমন অকার্যকর খাতেও ফি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সেমিস্টারে ভর্তি ফিতে ১৩টি খাত রয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে শুধু এক খাতেই ৭০০ টাকা ফি বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেমিস্টার ভর্তিতে তিন ধরনের ফি পরিশোধ করেও কোনো সেবা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের ইউনিয়ন ফি (ছাত্রসংসদ ফি) ১০০ টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ গত ২৭ বছর ধরে শাবিপ্রবিতে ছাত্রসংসদ কার্যকর নেই। খাতা-কলমে রোভার স্কাউট ফি থাকলেও এ রকম কোনো ব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে স্নাতক শ্রেণিতে ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ছয়টি ব্যাচের প্রায় ১০ হাজার ৭২৫ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারে অধ্যয়ন করছেন। হিসাব করলে দেখা যায়, সব শিক্ষার্থী একটি সেমিস্টারের ইউনিয়ন ফি ১০০ টাকা বাবদ প্রতি সেমিস্টারে দিলে সর্বমোট ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকা হয়। অথচ এসব খাতের দৃশ্যমান কোনো সেবা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না বলে তাঁদের অভিযোগ। প্রশাসনের দাবি, এসব ফির অর্থ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে কী কী খাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এর কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপ ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, ‘সেমিস্টার ফির বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান ও ডিনদের নিয়ে মতবিনিময় করেছে কর্তৃপক্ষ। মতবিনিময়ে সেমিস্টার ফি পুনর্র্নিধারণের বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে। এসব আউটপুট আগামী একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকের পর জানা যাবে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মমিনুর রশিদ বলেন, ‘জুনিয়রদের ফি জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সমানই থাকার কথা। কিন্তু দুই ব্যাচের সেমিস্টার ফির মধ্যে এত টাকার ব্যবধান চরম বৈষম্য। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ছাত্রদের অনুকূলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আজাদ শিকদার বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে আমরা সকল ধরনের অযৌক্তিক ফি কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি। অযৌক্তিক ফি কমানো হবে বলে আমাদেরকে আশ্বস্তও করা হয়। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো এখন পর্যন্ত আমরা কোনো কার্যকরী সিদ্ধান্ত দেখতে পাইনি। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্ত করে দ্রুত ফি কমানো উচিত।’