দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন বলেছেন,বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার । বিভিন্ন এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যারা ঘাপটি মেরে বসে আছে, তাদেরকে দিয়ে নৈরাজ্য করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন তিনি।
বাংলাদেশের মানুষ এই ফ্যাসিস্ট হাসিনার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছে। আমরা কোনো ষড়যন্ত্রকে কাজে লাগাতে দেব না।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে জামায়াতে ইসলামীর নেত্রকোণা জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ভারত শাসন করছে যে বিজেপি, তারা চরম সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল একটি রাজনৈতিক দল। তার শাসক গোষ্ঠী শেখ হাসিনাকে প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশে আরেকটি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে হাসিনাকে আবার এখানে আনার ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি আরও বলেন, হাসিনার বক্তব্যের জন্য ভারত দায়ী নয়, এ কথা আন্তর্জাতিকভাবে অসত্য। কারণ, আপনারা আশ্রয় দিয়ে দুধ-কলা খাইয়ে বড় করছেন। আপনার মিডিয়া, আপনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন। তবে কেন আপনি দায়ী হবেন না?
তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল, আপনি যে বক্তব্য দিচ্ছেন হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক নাই। এটি অসত্য কথা। দেশের এত বড় একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলে পরিচিত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্যের সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতির কোনো মিল নেই। এর জন্য কোনো দেশকে আমরা দায়ী করি না।
কর্মী সমাবেশে নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, নির্বাচন তো দিতে হবে। কিন্তু নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রয়োজন। ১৫ বছর ধরে প্রশাসনে যে জঞ্জাল জমে আছে। দলবাজ, দুর্নীতিবাজ- এসব ছেটে প্রশাসনকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। এরা ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।
জামায়াত সেক্রেটারি আরও বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বার্থে সম্পৃক্ত পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, জুডিসিয়ারি, সাংবিধানিক কিছু বিধি-বিধান, রাষ্ট্রের কিছু অর্গান, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এসব ন্যূনতম সংস্কার আগে করতে হবে। তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে এসব আওয়ামী ফ্যাসিবাদী খুনি-হত্যাকারীদের বিচার ট্রাইব্যুনালে দৃশ্যমান হতে হবে, তারপর নির্বাচন হবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এক সাগর রক্ত গেল, হাজার হাজার জীবন গেল। তাই দুই মাস আগে কিংবা পরে নির্বাচন হলো, তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ১৫ বছর অপেক্ষা করতে পারি, ছয় মাস আগে-পরে হবে এটা বিষয় না।
তিনি বলেন, প্রশাসনকে পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার করে নির্বাচন করতে একটু সময় লাগবে। যেটুকু সময় লাগবে, তা দিতে জামায়াতে ইসলামী প্রস্তুত আছে।
ফ্যাসিবাদের দোসর কারা, তাদের আচরণ ও কথাবার্তা শুনলে টের পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যখন ডিসি, এসপি, থানার ওসি, এসআই কিংবা প্রশাসনে যাই তাদের আচরণে বোঝা যায়। অনেকের কথার মধ্যে মধ্য দিয়ে এখনও ফ্যাসিবাদের গন্ধ আসে। প্রশাসনের এই জায়গাগুলো পরিষ্কার করুন।
এ সময় অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, আপনি নির্বাচনের জন্য যে সম্ভাব্য ডেডলাইন দিয়েছেন, আপনার দেওয়া সেই ডেডলাইনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করুন, খুনিদের বিচার নিশ্চিত করুন। তারপর নির্বাচনের সম্ভাব্য ডেডলাইন আপনি ঘোষণা করুন। সেই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী আপনাদেরকে সহযোগিতা করবে।
নেত্রকোণা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা ছাদেক আহমাদ হারিছের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চল পরিচালক ড. ছামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাবেক নেত্রকোণা জেলা আমির মাওলানা এনামুল হক, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মুফতি আবু ইউসুফ খান প্রমুখ।