ছাতক প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা মিলেমিশে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক পরিবারের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও পুরো মার্কেট জবরদখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মারপিট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহজাহান হোসেন নামের অন্যতম স্বত্বাধিকারীকে। সম্প্রতি এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জাউয়াবাজারে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শাহজাহানের ভাই, প্রতিষ্ঠানের অন্যতম স্বত্বাধিকারী যুক্তরাজ্যের লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএসও) জাহাঙ্গীর হোসেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে গত ৯জুন একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছাতক উপজেলার জাউয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত ওয়াশিদ আলীর পরিবার দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে স্ব পরিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করে আসছেন। লন্ডনে তাদের পরিবারের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। পাশাপাশি পৈতৃক এলাকা স্থানীয় জাউয়াবাজারেও রয়েছে ‘হাজী ওয়াশিদ আলী কমপ্লেক্স’ নামে একটি মার্কেট। এই মার্কেটের মধ্যেই রয়েছে বড় পরিসরে তাদের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নিজেরা প্রবাসে থাকায় মার্কেটের ভাড়া আদায় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশোনার জন্য স্থানীয় কয়েকজন পরিচিত লোককে কেয়ারটেকার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। নিয়োজিত কর্মচারিরা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করলেও ইদানিং তারা আদায়কৃত অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছিল না। যোগাযোগের চেষ্টা করলেও নানা অজুহাতে ওরা এড়িয়ে যেতো। বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন এর সন্দেহ হলে গেল ১৩ মার্চ ছোট ভাই শাহজাহান হোসেনকে দেশে পাঠান। সে দেশে এসে নিয়োজিত কর্মচারিদের কাছে মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসেব চাইলে তারা দিমু-দিচ্ছি বলে কালক্ষেপন করতে থাকে। তাদের আচরণে শাহজাহান হোসেন ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে নিয়োজিত কর্মচারিদের অপসারণ করে নিজ দায়িত্বে মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাউয়া গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর ছেলে, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক নেতা আলমগীর হোসেন (৫৩)-এর যোগসাজশে একই গ্রামের মৃত জুবেদ আলীর ছেলে, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন বিএনপি‘র সাবেক সভাপতি, ছাতক উপজেলা বিএনপি’র বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য এনাম উদ্দিন (৫৫) ও স্থানীয় খিদ্রাকাপন গ্রামের মৃত আরজু মিয়া তালুকদারের ছেলে, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি, রেজা মিয়া তালুকদার (৫৯)-এর যৌথ নেতৃত্বে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে শাহজাহান হোসেন জাউয়াবাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বিধায় এনাম উদ্দিন ও রেজা মিয়ারা সালিশ প্রক্রিয়া উপেক্ষা করতে থাকেন। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দকে অবগত করে শাহজাহান হোসেন গেল ১৫ এপ্রিল দুপুরে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে দেন। এতে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে দুই দলের নেতারা গেল ২৬ এপ্রিল রাতে নিকটবর্তী শান্তিগঞ্জ উপজেলার বেতকোনা গ্রামের সাহাব উদ্দিনের ছেলে আবু ইসফাক (৩০), একই উপজেলার খাড়ারাই গ্রামের মৃত আবদুস শহীদের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৪০), ছাতক উপজেলার চেচান গ্রামের জহুর আলীর ছেলে জুবেল আহমদ (২৭) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে মার্কেটে এসে যন্ত্র দিয়ে দোকানকোঠার সাটারিং-এর দরজা কেটে জোরপুর্বক দখল করে নেয়। খবর পেয়ে প্রবাসী শাহজাহান হোসেন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দখলকারিদের অন্যায়-অপকর্মে বাঁধা প্রদান করলে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে আহত করে। হামলাকারীদের মারমূখী আচরণে ভীত হয়ে স্থানীয় লোকজন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন। কিছুক্ষণ পরে জাহাঙ্গীর হোসেনদের আত্মীয়-স্বজন ও বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত শাহজাহান হোসেনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকালে সন্ত্রাসীরা জাহাঙ্গীর হোসেনদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে থাকা সিসি টিভি ক্যামেরা, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক, মনিটর, ডেকোরেশন সামগ্রী ভাংচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করে। বর্তমান সময়ে দেশে তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশনে যাবে না।’ প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং ছোট ভাই শাহজাহান হোসেনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর শংকা দেখা দেয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁকে লন্ডনে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
রাজনৈতিক মতাদর্শে ব্যক্তিবর্গরা ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের মতাবলম্বী হলেও দুর্নীতি ও অপকর্মে ওরা এক ও অভিন্ন। যে কারণে কোন কোন অভিযুক্ত সদ্যক্ষমতাচ্যূত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও অভিযুক্তদের কেউ কেউ বিএনপি রাজনীতির মতাদর্শে বিশ্বাসী ও বড় মাপের নেতাও বটে। তবে জবরদখল বা অন্যায় স্বার্থ হাসিলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতভিন্নতা তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারেনি। উভয়দলের স্থানীয় দূর্নীতিবাজ নেতারা মিলেমিশে চাঁদাবাজি, জবরদখল আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারার মতো অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেনদের মালিকানাধীন মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও অবৈধ দখলদারদের কাছে জিম্মি থাকায় প্রবাসী পরিবারটি চরম হতাশ। নিরীহ প্রবাসীর উপর অন্যায় ভাবে হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং জবরদখলে থাকা সম্পত্তি উদ্ধারে দেশের সেনাবাহিনীকে বলিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করতে হাই কমিশনারের নিকট অনুরোধ জানানো হয়।