
জন্মের পর একদিন সবাইকে দুনিয়া ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যেতে হবে। ইসলামে মৃত্যুর পর আত্মার শান্তির জন্য দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত ও সৎকর্ম করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে অনেক এলাকায় প্রচলিত রয়েছে মৃত্যুর পর ৪০তম দিনে বা ‘চল্লিশা’ আয়োজন করে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের খাওয়ানোর প্রথা। প্রশ্ন হলো, ইসলাম কি এসব অনুষ্ঠান সমর্থন করে? চল্লিশা খাওয়ানো কি জায়েজ আছে?
এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ কাজের প্রতিফল সম্পূর্ণভাবেই কিয়ামতের দিন পাবে।’(সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)
সুরা নাহলে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (আয়াত ৬১)
ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের নির্দিষ্ট দিন বেঁধে খাওয়ানো বা আয়োজন করার বিষয়টি কোরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত নয়। তারা বলেন, মৃতের জন্য সওয়াব পৌঁছানোর সর্বোত্তম উপায় হলো তার জন্য দোয়া করা, কোরআন পাঠ করা, সদকা করা এবং তার অসম্পূর্ণ সৎকর্মগুলো পূরণ করা।
তবে অনেকেই একে সামাজিক রীতি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে পালন করে থাকেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও সামাজিক প্রথার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
প্রশ্ন হলো, ইসলাম কি এসব অনুষ্ঠান সমর্থন করে? এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী বিদআত হলো ‘চল্লিশা’ খাওয়ানো। এর চেয়ে বড় বিদআত এই দেশে আর নাই।
তিনি বলেন, হিন্দুদের মধ্যে একটা ধারণা আছে— যদি কোনো মানুষ মারা যায়, তবে তার মৃত্যুর পর এলাকাবাসী এবং আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে না খাওয়ালে ওই মৃত ব্যক্তি স্বর্গে সোনা-দানা পায়, কিন্তু খাবার পায় না। না খেয়ে কষ্ট করে থাকতে হয়। ফলে এই লোকের জন্য জীবিতরা যে খাবার-দাবারের আয়োজন করেন, এই আয়োজনকে শ্রাদ্ধ বলা হয়। আর হিন্দুদের এই সংস্কৃতিটিই মুসলমানদের মধ্যে ‘চল্লিশা’ নামে ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই।
ইসলামি এই স্কলার আরও বলেন, চল্লিশার এই বিদআত আমাদের সমাজ থেকে শক্তভাবে দূর করতে হবে। আমাদের সচেতন হতে হবে। স্বজন মারা গেলে দান-সদকা করুন, মসজিদ-মাদ্রাসার ইট কিনে দেন, এতে করে মৃত ব্যক্তি কবরে থেকেও সওয়াব পাবনে। তবে, আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে ‘চল্লিশা’ করা যাবে না। এটা সুন্নাহবিরোধী। নবীজীবনে এর কোনো প্রমাণ মেলে না।
আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ মারা গেলে তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল হও। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা কর। কারণ, তাদের রান্না করার মতো মানসিক অবস্থা নাই। কিন্তু মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে চল্লিশা খাওয়ানোর কোনো কথা নবীজি (সা.) বলেননি।
হাদিসে হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ আলবাজালী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘আমরা (সাহাবারা) দাফনের পর মৃতকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়া ও খাবারের আয়োজন করাকে ‘বিলাপ’ বলে গণ্য করতাম।’ (মুসনাদে আহমদ : ২/২০৪; ইবনে মাজাহ : ১৬১২)
কেউ মারা গেলে তার জন্য সওয়াব পৌঁছাতে চাইলে বেশি বেশি দান-সদকা করুন। হাঁ, দিন-তারিখ নির্ধারণ না করে পুণ্যলাভের আশায় গরিব-মিসকিনদেরকে খাবার খাওয়ানোও যাবে। তবে, কোনো ভাবেই বাধ্যতামূলক মনে করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘চল্লিশা’ আয়োজন করা যাবে না।