
রাইজিংসিলেট- নির্ধারিত ভারত সফরের এক সপ্তাহ আগে সহিংস আন্দোলনের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। দেশটিতে উদ্ভূত এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমিতে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নেপালের এই সরকার পতনের ঘটনা সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে তৃতীয়বার। সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন এবং দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালানো ছাড়াও, কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করেছেন। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের গণঅভ্যুত্থানের মিল রয়েছে।
ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে, নেপাল শুধু একটি প্রতিবেশী দেশ নয়, বরং কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের সঙ্গে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের (উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ) প্রায় ১,৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। চীনের সঙ্গে নেপালের ঘনিষ্ঠতা এবং হিমালয়ের প্রবেশদ্বার হিসেবে এর ভূরাজনৈতিক অবস্থান ভারতীয় নিরাপত্তার জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।
ভারতে বসবাসরত প্রায় ৩৫ লাখ নেপালি এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত প্রায় ৩২ হাজার গুর্খা সেনাও এই সম্পর্ককে মানবিক ও প্রতিরক্ষা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও নেপালের সঙ্গে ভারতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেপালের পরিস্থিতিকে “হৃদয়বিদারক” বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং দ্রুত মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁর বক্তব্যে নেপালের স্থিতিশীলতা ও শান্তি রক্ষার গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংকটের মতোই নেপালের এই অস্থিরতাও নয়াদিল্লির জন্য অপ্রত্যাশিত। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ওলির ভারত সফরের এক সপ্তাহ আগে পদত্যাগ করার ঘটনায় বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এদিকে, চীন ও ভারতের মধ্যে নেপালে প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, ভারতের উচিত এখন অত্যন্ত কৌশলী ও সংবেদনশীল কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে না হয়।
২০১৯ সালের মানচিত্র বিতর্কে নেপালের প্রতিক্রিয়া এবং পাল্টা মানচিত্র প্রকাশের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে, তবে ভারত-নেপাল সম্পর্ক এখনও অনেকাংশে স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের উচিত নতুন নেপালি নেতৃত্বের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তরুণ জনগণের আশাআকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর কূটনীতি চালানো। দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্বের ভূমিকায় ভারতকে যদি নিজেকে প্রমাণ করতে হয়, তবে তা একমাত্র প্রতিবেশী অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেই সম্ভব।
অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় মেজর জেনারেল অশোক মেহতা মন্তব্য করেছেন, “ভারত যদি সত্যিই একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়, তাহলে তাকে আগে নিজের চারপাশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।”