
মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ছাড়া যেন এক মুহূর্তও কাটানো কঠিন। অফিসের ব্যস্ততা কিংবা অবসরের ফাঁকে সারা দিনই হাতে মোবাইল, কোলে ল্যাপটপ নিয়ে সময় কাটানো এখন নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই অভ্যাসই ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জেনেটিক্স রিসার্চ ইউনিট এবং ইনস্টিটিউট অব রি-প্রডাকটিভ মেডিসিন যৌথভাবে পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় পকেটে মোবাইল ফোন রাখা কিংবা ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কাজ করার ফলে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
শুধু তা-ই নয়, শুক্রাণুর ঘনত্ব ও গঠন পরিবর্তিত হচ্ছে, গতিশীলতা কমছে এবং ডিএনএর ক্ষতিও হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত তাপমাত্রা শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে এবং দীর্ঘ মেয়াদে প্রজনন সক্ষমতা হ্রাস করে।
যদিও সব গবেষণার ফলাফল একরকম নয়, তবু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। তাদের মতে, মোবাইল সরাসরি পকেটে না রাখা, ল্যাপটপ কোলে না রেখে টেবিলে ব্যবহার করা, একটানা দীর্ঘ সময় প্রযুক্তি ব্যবহার এড়িয়ে চলা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই পারে এ ঝুঁকি অনেকটা কমাতে। তাদের আশঙ্কা—সচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে অনেক পুরুষকেই প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হতে পারে।
২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী প্রায় ১২০০ পুরুষকে নিয়ে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা গেছে, প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় মোবাইল ফোন পকেটে রাখা কিংবা ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসার অভ্যাস সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
বিশেষ করে ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। গবেষক সমুদ্র পাল জানান, যেসব তরুণের শরীরে নির্দিষ্ট ধরনের জেনেটিক মিউটেশন রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ক্ষতির মাত্রা আরো বেশি।
আন্তর্জাতিক গবেষণাতেও এর মিল পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোন থেকে নির্গত তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ ও ল্যাপটপের অতিরিক্ত উত্তাপ শুক্রাণুর মান নষ্ট করতে পারে।