রাইজিংসিলেট- রান্নায় বা খাবারের সঙ্গে লবণ প্রায় অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু এই অপরিহার্যতার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক নীরব শত্রু। আমাদের অনেকেরই অজান্তে প্রতিদিন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি লবণ গ্রহণ হয়, যা ধীরে ধীরে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে এবং নানা গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কেন বেশি লবণ ক্ষতিকর
চিকিৎসকরা বলেন, লবণের মূল উপাদান সোডিয়ামই আসল সমস্যা। অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের পানির ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, ফলে শরীর পানি ধরে রাখে ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর প্রভাবে—
রক্তচাপ দ্রুত বৃদ্ধি পায়
হৃদ্পিণ্ডকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়
রক্তনালি সংকুচিত ও শক্ত হয়ে পড়ে
হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়
কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনি বিকল হওয়ার কারণ হতে পারে
নিয়মিত অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ শরীরে নীরবে ক্ষতির বীজ বপন করে, যা অনেক সময় দেরিতে ধরা পড়ে।
স্বাস্থ্যকর বিকল্প অভ্যাস
লবণের ব্যবহার কমাতে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা কয়েকটি সহজ পদ্ধতি পরামর্শ দেন—
- লো–সোডিয়াম লবণ ব্যবহার করুন: এতে সাধারণ লবণের তুলনায় সোডিয়াম কম থাকে এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
-
প্রাকৃতিক উপাদানে স্বাদ আনুন: রান্নায় লেবুর রস, ভিনেগার, আদা, রসুন ও মশলার ব্যবহার স্বাদ বাড়ায় এবং লবণের প্রয়োজন কমায়।
-
টেবিলে লবণ না রাখার অভ্যাস করুন: সামনে লবণ থাকলে অজান্তেই বেশি খাওয়া হয়, তাই এটি পরিহার করা ভালো।
-
ড্যাশ ডায়েট অনুসরণ করুন: ফল, সবজি, হোল গ্রেইন, লো-ফ্যাট দুধজাত পণ্য ও লিন প্রোটিনসমৃদ্ধ এই খাদ্যাভ্যাস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং স্বাভাবিকভাবেই সোডিয়াম গ্রহণ কমায়।
নিরাপদ লবণ গ্রহণের পরিমাণ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে সর্বোচ্চ ২,৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম—অর্থাৎ প্রায় ১ চা চামচ লবণ—গ্রহণ করা নিরাপদ।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্রোগ রয়েছে, তাঁদের জন্য এই সীমা আরও কম, মাত্র ১,৫০০ মিলিগ্রাম। কিন্তু বাস্তবে অনেকেই এই সীমার দ্বিগুণ পর্যন্ত লবণ খেয়ে ফেলেন, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর।
সচেতনতার শুরু নিজের কাছ থেকে
খাবারে লবণ স্বাদের জন্য প্রয়োজন হলেও এর অতিরিক্ততা ধীরে ধীরে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে। তাই এখন থেকেই খাবারে লবণ কমানো, স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়া ও রান্নায় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার শুরু করলে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
কম লবণের অভ্যাস মানেই সুস্থ হৃদ্পিণ্ড, সঠিক রক্তচাপ ও দীর্ঘস্থায়ী ভালো জীবন।