
চব্বিশের জুলাই–আগস্টে দেশজুড়ে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন।
রায় ঘোষণার পরপরই বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুরু করে পশ্চিমা গণমাধ্যম—অধিকাংশই খবরটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।
এএফপি ও আল–জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগকে শিরোনামে স্থান দিয়েছে। বিবিসি এবং রয়টার্স খবর প্রকাশ করেছে “ছাত্র আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড” শিরোনামে।
এএফপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়—বাংলাদেশের একটি আদালত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল হত্যায় প্ররোচনা, হত্যার নির্দেশ এবং সংঘটিত সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থতা। আদালত বলেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একমাত্র শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডই প্রদান করা হচ্ছে।
রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানায়, গত বছরের ছাত্র আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি আরও উল্লেখ করে, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এত বড় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নজির নেই। রায় ঘোষিত হলো এমন সময়, যখন সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে।
কাতারভিত্তিক আল–জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কয়েক মাসব্যাপী শুনানি শেষে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তিনি ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি একই সুরে জানায়—মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধেও রায় ঘোষণা করা হয়। তবে প্রাক্তন পুলিশপ্রধান ক্ষমা প্রার্থনা করায় তার সাজা কিছুটা হালকা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি।
পাকিস্তানের ডন ও জিও নিউজ যথাক্রমে এএফপি ও রয়টার্সের অনুসরণে খবর প্রকাশ করে। উভয়ই ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়নের অভিযোগকে শিরোনামে তুলে ধরে।
তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সি জানায়—ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুপস্থিতিতে দায়ের হওয়া মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্ট দেশজুড়ে সহিংস পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। সে সময় সহিংসতায় ১,৪০০–র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে দাবি করা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নির্বাসনে থাকার কারণে তার অনুপস্থিতিতেই পুরো বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারকের প্যানেল হাসিনাকে শতাধিক বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য দায়ী বলে রায় দেয়।
ব্রিটিশ দ্য গার্ডিয়ানসহ ভারত, পাকিস্তান, কাতার ও ইউরোপের আরও বহু প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমও ঘটনার বিশদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।