
রাইজিংসিলেট- গুগলের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ব্যবসা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিতে এক ফেডারেল বিচারকের কাছে আবেদন জানিয়েছে মার্কিন সরকার। সরকারি আইনজীবীদের যুক্তি, তাদের ব্যবসায়িক পদ্ধতি বদলানোর জন্য টেক জায়ান্টটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করা যায় না।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ফেডারেল বিচারকের কাছে এই আবেদন জানায় সরকার।
গুগলের অ্যাড টেক ‘স্ট্যাক’—যে টুলগুলোর মাধ্যমে ওয়েবসাইট পাবলিশাররা বিজ্ঞাপন বিক্রি করেন এবং বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন কেনেন—এ নিয়ে দায়ের করা মামলায় সরকারি আইনজীবীরা তাদের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ বছর এটি গুগলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বড় অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা।
এর আগে সেপ্টেম্বরে বিচার বিভাগ (ডিওজে)-এর এক বিচারক গুগলের বৈশ্বিক সার্চ ব্যবসা ভেঙে দেওয়ার দাবি খারিজ করে দেন।
অ্যাপল, অ্যামাজন, মেটাসহ বড় টেক কোম্পানিগুলোর বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য কমানোই মার্কিন সরকারের বৃহত্তর লক্ষ্য। তবে এখন পর্যন্ত এসব মামলার ফলাফল মিশ্র। চলতি সপ্তাহে আরেক বিচারক মেটার বিরুদ্ধে সরকারের মামলা খারিজ করেছেন।
শুক্রবার দাখিল করা নথিতে ডিওজে ও কয়েকটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য অভিযোগ করে, গুগল দুটি আন্তঃসংযুক্ত বিজ্ঞাপন প্রযুক্তির বাজারে বেআইনিভাবে একচেটিয়া অবস্থান গড়ে তুলেছে। দাবি করা হয়, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুগল বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রকাশকদের বিজ্ঞাপন বিক্রির প্ল্যাটফর্ম, লেনদেনের এক্সচেঞ্জ ও বিজ্ঞাপনদাতাদের বিপুল চাহিদা—সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।
ডিওজে জানায়, গুগল একসময় তাদের এই সিস্টেমকে তুলনা করেছিল যেন গোল্ডম্যান স্যাকস নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের মালিক।
ডিওজের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গেইল স্লেটার এক্স-এ লিখেছেন, “গুগলের একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে দেওয়াই সেরা সমাধান; এতে নতুন প্রতিযোগী তৈরি হবে।”
গুগল পাল্টা যুক্তিতে বলে, প্রস্তাবিত ব্যবস্থা হবে ‘চরম সরকারি হস্তক্ষেপ’, যা প্রকাশক, বিজ্ঞাপনদাতা ও ভোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাদের দাবি, সমন্বিত বিজ্ঞাপন টুলগুলো দক্ষতা বাড়ায় এবং সেগুলো ভেঙে ফেলা প্রযুক্তিগতভাবে প্রায় অসম্ভব।
এ বছর মামলার প্রাথমিক রায়ে ফেডারেল বিচারক লিওনি ব্রিঙ্কেমা বলেন, গুগল ইচ্ছাকৃতভাবে পাবলিশার অ্যাড সার্ভার এবং অ্যাড এক্সচেঞ্জ—উভয় বাজারেই একচেটিয়া ক্ষমতা দখল করেছে। এরপরই চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
প্রসিকিউটররা এখন কঠোর পদক্ষেপ চাইছেন—এর মধ্যে রয়েছে গুগলকে অ্যাডএক্স এক্সচেঞ্জ বিক্রি করতে বাধ্য করা ও গুরুত্বপূর্ণ নিলাম প্রযুক্তি ওপেন-সোর্স করে দেওয়া।
আমেরিকান ইকোনমিক লিবার্টিজ প্রজেক্টের লরেল কিলগোর মনে করেন, বিচারক ব্রিঙ্কেমা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে রায়টি পরে বাতিল হতে পারে, কারণ গুগল নিশ্চিতভাবেই আপিল করবে—ফলে প্রক্রিয়া বহু বছর ধরে চলবে।
১১ দিনের এই বিচারে ১৯ জন সাক্ষী এবং সাতজন বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
সার্চ ইঞ্জিন মামলায় বিচারক বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থান গুগলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার কারণ। তবে অ্যাড টেক মামলায় ডিওজে যুক্তি দেয়, এআই বরং গুগলের আধিপত্যকে আরও সুদৃঢ় করবে।
মামলার চূড়ান্ত রায় কয়েক মাসের মধ্যেই দেওয়া হবে।