
বিজ্ঞানীরা অসম্ভবকে সম্ভব করার পথে । ভূমিকম্প ঠিক কখন, কোথায়, কোন মাত্রায় হবে—এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর বিজ্ঞানীরা এখনো দিতে পারেননি, তবে সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সেই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ইউনিভার্সিটির গবেষকরা চীনের একটি ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলে সাত মাস ধরে তাদের উদ্ভাবিত এআই অ্যালগরিদমটির পরীক্ষা চালান। এই পরীক্ষায় আশ্চর্যজনক নির্ভুলতায় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য সময়, স্থান ও মাত্রা আগাম জানাতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্বের নানা প্রান্তের গবেষকেরা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভূমিকম্প সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণের নতুন পদ্ধতি তৈরি করছেন, এবং ইতোমধ্যে তারা উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পেয়েছেন।
গবেষণায় দেখা যায়, সম্ভাব্য ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ আগেই সতর্কবার্তা দিতে পেরেছে অ্যালগরিদমটি। এটি প্রায় ৭০ শতাংশ সঠিক ছিল এবং ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও মাত্রা আনুমানিকভাবে বেশ কাছাকাছি ছিল। তবে এই পূর্বাভাস পুরোপুরি নিখুঁত ছিল না, কারণ এটি একটি ভূমিকম্প ধরতে ব্যর্থ হয়েছিল।
গবেষক দলটি পাঁচ বছরের সিসমিক ডেটা দিয়ে এআই মডেলটিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অতীতের ভূমিকম্পের প্যাটার্ন ও ডেটার ওপর ভিত্তি করে এটি সম্ভাব্য পরবর্তী ধাক্কাটি কোথায় এবং কখন হতে পারে, তা অনুমান করে। অ্যালগরিদমটি রিয়েল-টাইম সিসমিক সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে পরিসংখ্যানগত অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করে, যা বড় কোনো ভূমিকম্পের আগাম ইঙ্গিত হতে পারে।
মার্কিন ভূ-পদার্থবিদ জ্যাকরি রস সুপার-কম্পিউটিং ও মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ভূত্বকে ফাটল এবং তার গতিবিধি বোঝার জন্য নতুন একটি পথ খুঁজে বের করেছেন।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জ্যাকরি রস বলেন, কিছু ভূ-কম্পন আমরা অনুভব করতে পারি না, কিন্তু মেশিন সেগুলো শনাক্ত করতে পারে, যা সম্ভাব্য ‘বড় ভূমিকম্পে’র নির্দেশ দিতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় গবেষণা চালিয়ে তিনি মানুষের পক্ষে আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিন—এমন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কম্পনের ডেটা এআইয়ের মাধ্যমে চিহ্নিত করেন।
গবেষকদের মতে, এআইভিত্তিক নতুন পদ্ধতি সরাসরি ভূমিকম্পের নির্দিষ্ট সময় নির্দেশ করতে সক্ষম না হলেও ফল্ট লাইনের অস্বাভাবিক আচরণ আগেভাগে শনাক্ত করতে বড় সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে এসব মডেল প্রাথমিক সতর্কবার্তা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হলে সম্ভাব্য দুর্যোগের আগেই জনগণকে প্রস্তুত হতে সহায়তা করতে পারে।
গবেষণার অংশ হিসেবে, আগে সংগ্রহ করা ভূ-কম্পন ডেটার বিভিন্ন প্যাটার্ন থেকে বানানো ‘টেমপ্লেটের’ সঙ্গে এআই-অ্যালগরিদম যুক্ত করে জ্যাকরি রস ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ নতুন কম্পন চিহ্নিত করেন, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে ধরা অসম্ভব ছিল। এই পদ্ধতিতে কম্পনের সঙ্গে সঙ্গে ফল্ট বা ভূস্তরে কীভাবে সময়ের সঙ্গে শক্তি জমা হয় এবং প্রতিনিয়ত স্থানান্তরিত হয়, তার তথ্যও পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ধস কোথায় হবে, তা অনুমান করা সম্ভব বলে মনে করেন জ্যাকরি।