
মৌলভীবাজারে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসায় অ্যান্টিভেনম সংকট ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতি মাসে গড়ে ৪০ জন রোগী ভর্তি হলেও তাদের তুলনায় প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনমের ঘাটতি বিরাজ করছে। আবার কোথাও প্রতিষেধক মজুত থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে তা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না—ফলে বাড়ছে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা ৪১০ জন। এর মধ্যে মাত্র ২১ জনকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমপক্ষে ২০ ভায়েল অ্যান্টিভেনম মজুত থাকার কথা থাকলেও অনেক হাসপাতালে রয়েছে মাত্র ১০ ভায়েল। বর্তমানে পুরো জেলায় অ্যান্টিভেনমের মজুত মাত্র ৯০ ভায়েল—যা প্রয়োজনের মাত্র ২২ শতাংশ।
অ্যান্টিভেনমের দাম বেশি হওয়ায় একসঙ্গে পর্যাপ্ত ভায়েল কেনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত চিকিৎসক না থাকায় অনেক সময় প্রতিষেধক থাকা সত্ত্বেও তা রোগীদের প্রয়োগ করা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি কমলগঞ্জে ২৩ অক্টোবর ফুলবাড়ি চা বাগানে গ্রিন পিট ভাইপারের কামড়ে আহত হন মাধবী মির্ধা (২৫) নামে এক নারী চা শ্রমিক। হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষায় রাখা হলেও চিকিৎসা জটিলতার কারণে তাকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
চিকিৎসকদের দাবি, সাপে কাটা রোগীকে অ্যান্টিভেনম দেওয়ার আগে সাপটি বিষধর কি না যাচাই এবং রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে প্রায় ৩০–৪০ মিনিট সময় লাগে। এছাড়া যেসব চিকিৎসক বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, একমাত্র তারাই অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে পারেন—ফলে দ্রুত চিকিৎসা ব্যাহত হয়।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান বলেন,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টিভেনম আছে, তবে চাহিদার তুলনায় কম। প্রতিষেধকের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই বেশি মজুত রাখেন না। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি যেনো প্রতিটি হাসপাতালে অন্তত দুজন রোগীর জন্য ভায়েল প্রস্তুত রাখা হয়। এখন অনলাইনে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
জেলায় প্রতিষেধক সংকট ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সচেতন মহল।