
রাইজিংসিলেট- বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধ থাকা সরাসরি আকাশপথ পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে। পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান জানিয়েছেন যে, খুব শিগগিরই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স করাচি রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে। নতুন এই রুটে সপ্তাহে তিন দিন ফ্লাইট চলবে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ফরেন সার্ভিসেস অ্যাকাডেমিতে এক বক্তব্যে তিনি জানান, দুটি দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। ভারতের আকাশসীমা ব্যবহারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেমন ভারতীয় উড়োজাহাজ বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে, তেমনি করাচিগামী ফ্লাইটও ভারতের ওপর দিয়েই চলাচল করবে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, পাকিস্তানের ওপর ভারতের চলমান আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার কারণে পাকিস্তানি বিমান সংস্থার পক্ষে এখনই ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালু করা সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই রুট পুনরায় চালুর উদ্যোগকে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হাইকমিশনার ইকবাল হুসাইন খান জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ থাকলেও সীমিত প্রবেশাধিকার, সীমান্তজট ও আঞ্চলিক রাজনীতি উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে। তিনি অতীতে রেলযোগে পণ্য পরিবহনের সুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানের খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য সরাসরি বাজারে পৌঁছাতে না পেরে দুবাই হয়ে ঘুরে আসতে হয়, যা খরচ ও সময় দুইই বাড়ায়।
তিনি মনে করেন, সরাসরি রুট চালু হলে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি কৃষকরাও বাড়তি আয়ের সুযোগ পাবেন। পশমিনা ও খেজুরের মতো ঐতিহ্যবাহী পণ্যের বাণিজ্যও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
ইকবাল হুসাইন খান দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক উন্নয়নে দুর্বল ভৌগোলিক সংযোগকে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একসময় কাবুল, পেশোয়ার থেকে ঢাকা ও মিয়ানমার পর্যন্ত প্রাচীন বাণিজ্যপথ সক্রিয় ছিল, যা আঞ্চলিক সংযোগের শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছিল। তার মতে, আঞ্চলিক সহযোগিতা ছাড়া কোনো দেশ একা টেকসই উন্নতি করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ঔপনিবেশিক মানসিকতা ও মতাদর্শিক আধিপত্য আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে দুর্বল করেছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ প্রজন্ম ইতিমধ্যেই পরিবর্তন ও সহযোগিতার দিকে বেশি মনোযোগী। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনও নতুন প্রজন্মের মাঝে আশাবাদ তৈরি করেছে।
হাইকমিশনারের মতে, নতুন নেতৃত্ব ও আঞ্চলিক সহযোগিতা অর্থনৈতিক অগ্রগতির নতুন পথ খুলে দেবে এবং পুরোনো বাধা ভাঙতে সহায়তা করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে সময়ের সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হবে।