
রাইজিংসিলেট- যক্ষ্মা বা টিবি, যা ক্ষয়রোগ নামেও পরিচিত, একটি সংক্রামক হলেও বর্তমানে সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ। একসময় মানুষের মধ্যে এমন ধারণা প্রচলিত ছিল—“যক্ষ্মা হলে আর রক্ষা নাই।” কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এই ধারণার আর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
আগে যক্ষ্মার জীবাণু সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় কার্যকর চিকিৎসাও ছিল না। বর্তমানে জানা গেছে, মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক এক ধরনের অতি সূক্ষ্ম জীবাণুর কারণে যক্ষ্মা হয় এবং এর জন্য কার্যকর ওষুধও রয়েছে।
এই জীবাণু সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। যক্ষ্মা রোগীর কাশি, হাঁচি, কফ বা থুথু থেকে জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্বাসের সঙ্গে অন্য মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে বসলে যক্ষ্মা হয়—এ ধারণা সঠিক নয়। তবে বদ্ধ, স্যাঁতসেঁতে ও জনবহুল পরিবেশে রোগটি দ্রুত ছড়াতে পারে।
যক্ষ্মা যে কোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। সাধারণত দীর্ঘদিনের কাশি ও কফ যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ। শুরুতে হালকা জ্বর, কাশি ও কফ দেখা যায়। পরে ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া, অবসাদ, রাতে ঘাম হওয়া এবং বিকাল বা সন্ধ্যার দিকে জ্বর আসার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে উজ্জ্বল লাল রক্তও বের হতে পারে।
যদি কারও কাশি দুই থেকে তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে যক্ষ্মা পুরোপুরি ভালো করা সম্ভব।
যক্ষ্মা নির্ণয়ের জন্য সাধারণত কফ পরীক্ষা করা হয়। কফে জীবাণু পাওয়া গেলে রোগ নিশ্চিত করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই যক্ষ্মার জন্য আধুনিক ও কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে।
সঠিক সময়ে নিয়ম মেনে চিকিৎসা গ্রহণ করলে যক্ষ্মা এখন আর ভয়ংকর বা প্রাণঘাতী রোগ নয়। সচেতনতা, দ্রুত শনাক্তকরণ এবং সম্পূর্ণ চিকিৎসাই যক্ষ্মা নির্মূলের প্রধান উপায়।