
ছাতকে সরকারি জমি ও নদী সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসন ও বালুখেকোদের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
একের পর এক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ কার্যক্রম রুখে দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম।
দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ২০০ কার্যদিবসের মধ্যেই রেকর্ড ২৪০টি মামলা দায়ের করেছেন তিনি, যা গত ১৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
ইজারা বহির্ভূত নদী অঞ্চল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দায়ের হয়েছে ১৫টি মামলা, জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার ড্রেজার, বাল্কহেড, স্টিলের নৌকা এবং ৫০ হাজার ঘনফুট বালু।
প্রতিদিন মাদক, ইজারা বহির্ভূত বালু উত্তোলন, পরিবেশ আইন, ভোক্তা অধিকার এবং সড়ক পরিবহন আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। শুধু মাদক আইনে গত কয়েক মাসে দায়ের হয়েছে ৭২টি মামলা, যেগুলোর প্রতিটিতে অভিযুক্তরা আদালতের মাধ্যমে সাজা ভোগ করেছেন। অপরাধ দমন কার্যক্রমের পাশাপাশি বেড়েছে রাজস্ব আয়ও।
গত ৪ সেপ্টেম্বর হাদাঁপান্ডব এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বন বিভাগ ও ভূমি অফিসের যৌথ অভিযানে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও একটি ড্রেজার জব্দ করা হয়। অভিযুক্তরা পালিয়ে গেলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় অভিযোগ আনা হয়—অবৈধ বালু উত্তোলনের মাধ্যমে পরিবেশ ও ভূ-প্রকৃতিতে মারাত্মক ক্ষতি করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। জামিনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামপুর ইউনিয়নের বদরুল ইসলাম ও বাবুল মিয়া, তাতীকোনা গ্রামের মো. তারেক, কোম্পানীগঞ্জ থানার সাহাব উদ্দিন ও তার ছেলে জুবায়ের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বালুখেকোরা যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, নৌপথে সরকারি সম্পদ লুটপাটকারীদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। যত বাধাই আসুক, আমি সরকারি সম্পদ রক্ষা করব।’ তিনি আরও জানান, ‘বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে একাধিক মোবাইল কোর্ট নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পরিবর্তিত হয়ে বন্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে। পাশাপাশি নদীর তলদেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।