
আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে ওঠার আগেই মানুষ নির্ভর করত প্রকৃতির উপাদান, আচার-অনুষ্ঠান ও লোকবিশ্বাসের ওপর। সেই বিশ্বাসের অংশ হিসেবে বহু দেশে প্রচলিত রয়েছে এক অদ্ভুত রীতি ‘ডিম থেরাপি’। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি ডিম দিয়ে রোগ সারানো সম্ভব, নাকি এটি কেবলই লোকবিশ্বাসের অংশ?
ইতিহাসে ডিম থেরাপি- শুধু বাংলাদেশই নয়, লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকো, পেরু, কিউবা ও ফিলিপাইনে ‘লিম্পিয়া’ নামে প্রচলিত এক আচারেও কাঁচা ডিম ব্যবহার করা হয় শরীর শুদ্ধিকরণের প্রতীক হিসেবে। ডিমের ভেতরের আকৃতি দেখে অনেকেই অনুমান করেন রোগ বা দুর্ভাগ্যের উৎস সম্পর্কে।
লোকজ বিশ্বাসে ডিমের ব্যবহার
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক গ্রামাঞ্চলে এখনো দেখা যায় কোনো শিশু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা দৃষ্টিদোষ হয়েছে মনে হলে তার মাথার চারপাশে কাঁচা ডিম ঘুরিয়ে পরে সেটি ভেঙে দেখা হয়। ধারণা করা হয়, অসুস্থতার ‘খারাপ শক্তি’ ডিমের ভেতরে চলে আসে।
ডিমকে ঘিরে নানা বিশ্বাসের ইতিহাস বহু পুরোনো। প্রাচীন মিশর ও গ্রিসে ডিমকে মনে করা হতো উর্বরতা ও নতুন জীবনের প্রতীক। মধ্যযুগে ইউরোপেও ডিম ব্যবহার করা হতো অশুভ আত্মা তাড়াতে বা রোগমুক্তির প্রতীক হিসেবে। ভারতীয় উপমহাদেশেও গ্রামীণ সমাজে ডিম ব্যবহারের এই প্রথা নানা লোকাচারে দেখা যায়।
তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ডিম ঘুরিয়ে অসুখ সেরে যায় এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং কাঁচা ডিম ব্যবহারের ফলে স্যালমোনেলা নামের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে, যা শিশু ও বয়স্কদের জন্য বিপজ্জনক।
কুসংস্কার না সংস্কৃতি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের লোকাচার আসলে সমাজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরই অংশ। যদিও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এর কোনো স্বীকৃতি নেই, তথাপি মানসিকভাবে এটি অনেককে স্বস্তি দেয়। অসুস্থ অবস্থায় এমন আচার মানসিক ভরসা জাগায়, যা কখনও কখনও রোগীর মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে।
পুষ্টিগুণ ও আধুনিক ব্যাখ্যা
ডিম নিঃসন্দেহে প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার। এজন্য ডায়েট প্ল্যানে ডিমকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক সময় ‘ডিম ডায়েট’কেও মজা করে ‘ডিম থেরাপি’ বলা হয়।
এছাড়া চুল ও ত্বকের যত্নে ডিম ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে, যা কেউ কেউ ‘বিউটি থেরাপি’ বলে অভিহিত করেন।
ডিম থেরাপি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নয় এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এটি আমাদের লোকবিশ্বাস, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের একটি অংশ। আজকের দিনে চিকিৎসার বিকল্প না হলেও, মানুষের মানসিক সান্ত্বনা ও ঐতিহ্যের প্রতীকে ডিম থেরাপি এখনো টিকে আছে সমাজের বিভিন্ন প্রান্তে।