মাত্র ১৩ বৎসর বয়সি একজন কিশোরী, যুবতী হবার আগেই শুরু হয়েছে তার জীবনের বিশাল এক কালো অধ্যায়,সাক্ষী হয়েছে বাবা নামের এক নরপশুর জগন্ন অপরাধের। হয়ত বাবাদের প্রতি তার ধারনাটা সারা আজীবনই বদলাবেনা।
মাত্র ক্লাশ সেভেন শেষ করা ছাত্রী তার নিজ পিতা কর্তৃক ধর্ষনের মত জগন্ন অপরাধের ভিকটিম। অবাক হলেও এমন একটি ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের সুরিগাঁও গ্রামে। বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, এক ভাই দুই বোনের মধ্যে ঐ কিশোরী দ্বিতীয়, বড় ভাই কাজের সুবাদে থাকেন কুমিল্লা জেলায়। মাত্র দের বছর বয়সি বোনকে নিয়ে বাবা সহ বৃদ্ধা দাদা দাদীর সাথে হাওড়ের মধ্যখানে নির্জন একটি বাড়ীতে বসবাস করেন ঐ কিশোরি। তার পিতা প্রায় দশ বৎসর ওমান রাষ্টে থাকার পর কয়েক বছর আগে দেশে চলে আসেন। এক বৎসর পরেই মারা যান ভিকটিমের মা। মেয়েদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বাবা। আর সেই বাবার সাথে বসবাস করে গত চার মাস আগে কোনো এক রাত নিজ পিতা কর্তৃক জোরপূর্বক ধর্ষনের শিকার হয় ঐ কিশোরী।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এরপর আরও দুদিন তার সাথে এমন আচড়ন করছে পাষন্ড বাবা। এরপর বাবাকে এড়িয়ে চলা শুরু করে ঐ কিশোরী। কিছুদিন পর তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে। ভিকটিমের নানীও এক মামা তাকে স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন ভিকটিম প্রায় চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কে করলো এমন জগন্ন কাজ সেই প্রশ্নের জবাবে ভিকটিমের মুখে নিজের পিতার নাম প্রকাশ পায়।পরে লোকলজ্জার ভয়ে স্থানীয় মেডিকেল এলাকার কোনো এক বাসায় গোপনে ঘটানো হয় গর্ভপাত। তাতেই এলাকায় শুরু হয় তুলকালাম।
এ ঘটনায় এলাকা জুরে আলোচনা সমালোচনা হলেও মুখ খুলেন নি কেউ, লশুরুতে মেয়েটির পিতার নাম বেতীত কোনে তথ্য ছিলনা আমাদের হাতে।
তাই গর্ভপাতের বিষয়টি জানতে স্থানীয় কৈতক হাসপাতালের সহযোগিতা নিয়ে রেজীষ্টার খাতা চেক করেও পাওয়া যায়নি ভর্তি বা চিকিৎসার তথ্য।
ঘটনাটি শুনে প্রথমে কিছুটা বিব্রতবোধ হলেও জগন্নতম এই অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা চেলেন্জ হয়ে দাড়ায়। নিজ মেয়েকে ধর্ষনের পরও ধর্ষক বাবার সাথেই বসবাস করতে হচ্ছিল নিরুপায় ভিকটিমকে। তার নিরাপত্তা ও পরবর্তী জীবনের কথা ভেবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনিকে অবগত করা একান্তই জরুরী বলে মনে হয়েছিল।
আর সেটা না করলে অসহায় ঐ কিশোরি হয়ত সারা জীবনই নিজ পিতা কর্তৃক নির্যাতন বা ধর্ষনের শিকার হত। তাই ভিকটিমের নিরাপত্তার সার্থে তথ্য প্রমান সংগ্রপুর্বক পুলিশ কে জানানোর উদ্দোগ নেয় অনুসন্ধানি টিম।
কারণ তথ্য প্রমান বেতীত আপন পিতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সংবাদ প্রচার বা পুলিশ গ্রেপ্তার করা খুব একটা সহজ ছিলনা।
ঘটনার প্রায় পনের দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনাটি পড়েছিল চোখের আড়ালে। এবং প্রকাশ্যে ঘুরে বাড়াচ্ছিল বাবা নামের পাষন্ড ঐ নরপশু।
ঘটনা উদঘাটনের জন্য ভিকটিমের বক্তব্য অতি জরুরী। তবে তার কাছে যাওয়া বা সে কোথায় সেই তথ্যও পাওয়া যাচ্চিলনা। ভিকটিমের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে টানা তিন অতিবাহিত হলেও পাষন্ড পিতার বন্ধিশালায় অবস্থানরত অসহায় ভিকটিমের কাছে পৌছাতে সহযোগিতা করেনি কেউ। তবে শেষবেলা এলাকার কয়েকজন কিশোর। ছোট একটি নৌকা দিয়ে আমাদেরকে ভিকটিমের বাড়ীতে পৌছালো।
সেখানে ভিকটিমের পিতাকে না পেলেও তার বৃদ্ধা মা অর্থাৎ ভিকটিমের দাদীকে পাওয়া গেলো। তিনি প্রথমে এসব বিষয় ধরা না দিলেও অনেক কৌশলের পর ছেলে কর্তৃক নাতনী ধর্ষন ও নানী কর্তৃক গর্ভপাতের বিষয়টি স্বীকার করেন।
পাপাশি পঞ্চায়েতে জুতার মালা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শুক্রবার ধার্য্য ছিল বলেও জানান ভিকটিমের দাদী।
এবার ভিকটিমের মুখোমুখি হয়েও মিল্ল সত্যতা। তার দেওয়া স্পষ্ট কাতর অনেক বক্তব্য সামাজিক ও আইনি বাধ্যবাদকতার কারনে প্রচার করা সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের রেজিষ্টার খাতায় কোনে প্রমান না থাকলেও অবৈদভাবে জৈনেক নার্সধারা গর্ভপাতের ঘটনার তথ্য দেয় ভিকটিম।
সেই অনুযায়ী ভিকটিমের একটি ছবি নিয়ে সম্ভাব্য নার্সদের সম্মুখিন হলেও গর্ভপাতের কারও জানা নেই মর্মে অস্বীকার করেন।
তবে টানা তিনদিনের অনুসন্ধান শেষে সংবাদ প্রকাশের মত তথ্য সংগ্রহে সক্ষম হলেও আসামি গ্রেপ্তার ও ভিকটিম উদ্ধারের সার্থে গত বুধবার বিকেলে বিষয়টি ছাতক থানা পুলিশকে অবগত করা হয়। নেক্কার জনক এমন ঘটনার বর্ননা শুনে দ্রুতম সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার ও ভিকটিম উদ্ধারে জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জকে নির্দেশ দেন ছাতক থানার অফিসার শাহ আলম। ঐদিন সন্ধায় ধর্ষনকারী পাষন্ড পিতাকে আটক ও ভিকটিমকে উদ্ধার করে প্রথমে জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে এরপর ছাতক থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন অপকর্মের কথা শিকার করে ভিকটিমের বাবাও।
পরে ঐ দিন রাতে ভিকটিমের নানি বাদি হয়ে ভিকটিমের বাবাকে আসামি করে ছাতক থানায় একটি ধর্ষন মামলা দায়ের করেন। পরের দিন ৭ সেপ্টেম্বর বৃহশতিবার দায়েরী মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। অন্য দিকে ভিকটিমকে মেডিকেল চেকআপের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে পাটানো হয়েছে।
মামলার বিষয় নিশ্চিত করে ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম জানিয়েছেন এসব ঘটনা সামাজিক অভক্ষয়, প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সত্যতাও পাওয়া গেছে। ভিকটিমের নানী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।এ মামলায় বৃহস্পতিবার সকালে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।