ডেস্ক রিপোর্ট :: সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানাধীন চেঙ্গের খাল নদীর দুমখাল নামক স্থান থেকে বালু লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, কান্দিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার চামাউড়া কান্দি গ্রামের আব্দুর রউফ এর ছেলে সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক সদস্য ইমরান গাজী সহ উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সম্পৃক্ততায় এই বালু লুটপাটের মহাযজ্ঞ চলছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ, থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মেনেজ করে প্রতিদিন রাতের আধারে বালু লুটপাটের মহাযজ্ঞ চললেও অদৃশ্য কারণে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না পুলিশ ও উপজেলা প্রসাশন। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন— বিএনপি নেতা ইমরান গাজীর নেতৃত্বে চেঙ্গের খাল নদীর বালু লুটপাট!
স্থানীয় সুত্র থেকে জানা যায়, অবৈধভাবে বালু লুটপাটের সাথে জড়িত কালারুকা গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে শাহাবুদ্দিন, একই গ্রামের সাবেক কমর আলি মেম্বারের ছেলে রুবেল আহমদ, মৃত আপতাব আলীর ছেলে তৈমুছ আলী, মন্তাজ আলীর ছেলে আনফর। এবং মোগলগাঁও গ্রামের মর্তুজ আলির ছেলে গোলাপ, একই গ্রামের আব্দুর নুর এর ছেলে সালাম, আবুল কাশেম (আবুল) এর ছেলে নুর উদ্দিন (নুর), ও আব্দুল হামিদ। আলীনগর গ্রামের সোনামালার ছেলে কবির একই গ্রামের সাদুর রহমানের ছেলে আলী হোসেন তারা সবাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ইমরান গাজীর নেতৃত্বেই অবৈধভাবে বালু লুটপাট করছেন এবং ইমরান গাজী কে লোটপাটে শেল্টার দিচ্ছেন সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির শীর্ষ কয়েক নেতা।
তারা আরও জানান, রাতের আঁধারে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ হাজার ফুট মালবাহী ২০ থেকে ২৫ টি নৌকা বালু উত্তোলন করা হয়। পরে সেই বালু ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয় বাদাঘাট বালু বিক্রির সাইটে। যার সিংহভাগ নিয়ে নেন ইমরান গাজী।
এই সিন্ডিকেটের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু লুটপাট করার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে জানান, ইমরান গাজী উল্লেখিত সবাইকে টাকা দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করান এবং নিজেই এই বালু বাদাঘাট বালুর সাইটে এনে বিক্রি করেন।
ইমরান গাজীর দাবী, চেঙ্গের খাল নদী থেকে বালু উক্তোলন করার লিজ রয়েছে তাদের। লিজের বৈধতা হিসেবে উত্তরকাছ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ১২-১২-২০২৪ ইং তারিখের মেসার্স সিটি এন্টারপ্রাইজ এর পরিচালক মকসুদ আহমদ নামীয়-২৮৪ নং স্বারক প্রতিবেদক কে দেখান। যেখানে ৫% আয়কর ১৫% ভ্যাট সহ বার্ষিক চৌদ্দ লক্ষ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে উত্তরকাছ ইউনিয়ন ভুমি অফিসের আওতাধীন ছোটচর নামক স্থান থেকে বালু উত্তোলন করার অনুমতি রয়েছে।
আরও পড়ুন — উপজেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় রাজস্ব বঞ্চিত সরকার
উত্তরকাছ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল ওদুদ স্বাক্ষরিত-২৮৪ নং স্বারকে উল্লেখিত স্থানের চাতল মৌজার এস এ ১২৩ দাগে-১.৭১ একর, ৬৯১ দাগে-৬.০০ একর, ৬০০/১০১৬ নং দাগে ৫.৪০ একর মোট ১৩.১১ একর নদী থেকে বালু উত্তোলন করার বৈধতা পাওয়া যায়। কিন্তু বিলাজুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতাধীন চেঙ্গের খাল নদীর দুমখাল নামক স্থানের এক কিলোমিটার এলাকার কালারুকা মৌজার বিএস ৬৫ দাগে- ১১.৯৮ একর, ৬৪ দাগে- ১৩.১৮ একর, ৩১৬ দাগে- ১৮.৪২ একর, ১১৫৬ দাগে- ২৩.৪০ একর, ৪৪৩৭ দাগে- ৫৭.২০ একর, এবং ৪৪৩৬ দাগে- ১২.৮৫ একর সহ মোট ১৩৭.০৩ একর নদী থেকে বালু উত্তোলনের লিজ নেই বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন বিলাজুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) খালেদ আহমদ।
ইমরান গাজী মেসার্স সিটি এন্টারপ্রাইজ এর পরিচালক মকসুদের ব্যবসায়ীক পার্টনার থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে মকসুদ বলেন চেঙ্গের খাল নদী থেকে বালু উত্তোলন করার তার লিজ রয়েছে। দুমখাল নামক স্থান থেকে বালু উত্তোলন করার বৈধতা রয়েছে কি না? এমন প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এপ্রসঙ্গে, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন লুটপাট এবং তার সাথে বিএনপির কেউ জড়িতের বিষয়টি জানেন না, পরবর্তীতে জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এপ্রসঙ্গে, জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন লুটপাটের সাথে থানা পুলিশ কোনভাবেই জড়িত নয়। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এপ্রসঙ্গে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাহবুবুল ইসলাম এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লিজ বহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলন করার বিষয়টি অবগত হয়েছেন। লিজ গ্রহীতার সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রতিবেদককে আশ্বাস প্রদান করেন।
