
ব্যাংক হিসাবধারীদের আর ঢালাওভাবে আবগারি শুল্ক দিতে হবে না। সরকার ব্যাংক হিসাবের আবগারি শুল্কের ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক হিসাবের সর্বোচ্চ স্থিতি (ব্যালেন্স) যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, তবেই সেই হিসাবে আবগারি শুল্ক কাটা হবে। আগে এই সীমা ছিল মাত্র এক লাখ টাকা। ফলে সাধারণ গ্রাহকরা এবার কিছুটা আর্থিক স্বস্তি পাচ্ছেন।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে (২০২৪–২৫) এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘোষণা করা হয়, যা গত জুলাই মাস থেকে কার্যকর হয়েছে। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ব্যাংকগুলো গ্রাহকের হিসাবে নির্ধারিত হারে শুল্ক কেটে নেয় এবং গ্রাহকের মুঠোফোনে টাকা কর্তনের বার্তা পাঠায়।
কত টাকা থাকলে কত শুল্ক:
আবগারি শুল্কের হার স্থিতির ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন তবে ৩ লাখ টাকার নিচে কোনো শুল্ক নেই। ৩ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে ১৫০ টাকা শুল্ক কাটা হবে, ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতি হলে ৫০০ টাকা, স্থিতি ১০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা হলে শুল্কের পরিমাণ ৩,০০০ টাকা। অন্যদিকে ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতি থাকলে ৫,০০০ টাকা, ১ কোটি ১ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির জন্য ১০,০০০ টাকা এবং ২ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ক্ষেত্রে ২০,০০০ টাকা শুল্ক প্রযোজ্য হবে। যদি কোনো হিসাবে ৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা থাকে, তবে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হবে।
আবগারি শুল্ক কী ও কখন প্রযোজ্য
আবগারি শুল্ক হলো সরকারের আরোপ করা এক ধরনের পরোক্ষ কর, যা কোনো আয় বা মুনাফার ওপর নয়; বরং নির্দিষ্ট পণ্য, সেবা বা আর্থিক লেনদেনের ওপর ধার্য করা হয়। অর্থাৎ, বছরে একবার যদি কোনো ব্যাংক হিসাবে তিন লাখ টাকার বেশি অর্থ জমা থাকে বা ব্যালেন্স পৌঁছায়, তাহলেই সেই হিসাবে শুল্ক প্রযোজ্য হবে। এই শুল্কের উদ্দেশ্য সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিধি বৃদ্ধি করা এবং উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের করের আওতায় আনা।
কর্তনের নিয়মাবলী:
প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোনো গ্রাহকের হিসাবের স্থিতি যদি একবারও তিন লাখ টাকার বেশি হয়, তাহলে নির্ধারিত হারে শুল্ক কাটা হবে। একাধিকবার ওই সীমা অতিক্রম করলেও বছরে একবারই শুল্ক কাটা হয়। তবে, একজন গ্রাহকের বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলে, প্রতিটি হিসাব থেকে পৃথকভাবে শুল্ক কর্তন করা হবে।
যদি কোনো ব্যক্তির তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৪ লাখ টাকা করে থাকে, তবে প্রতিটি হিসাব থেকে ১৫০ টাকা করে মোট ৪৫০ টাকা শুল্ক কাটা হবে। এই শুল্ক প্রায় সব ধরনের ব্যাংক হিসাব—সঞ্চয়ী, চলতি, মেয়াদি আমানত (এফডিআরা), ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএসে) এবং বেতনভিত্তিক হিসাব—থেকে কাটা হয়। ব্যাংকগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকের হিসাব থেকে অর্থ কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়।