
রাইজিংসিলেট – জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায়কে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে স্পষ্ট মত বিভাজন দেখা গেছে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরসহ সমাজের একটি অংশ রায়কে স্বাগত জানালেও তারা মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেনি।
অন্যদিকে ভারতের শাসকদল বিজেপি এবং ভারতে থাকা আওয়ামী ঘরানার অনেক বাংলাদেশি রায়কে ‘ষড়যন্ত্র’ বা ‘প্রতিহিংসামূলক’ বলে দাবি করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আইনজীবী এ জামান মন্তব্য করেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হলো জাতিকে সুরক্ষিত রাখা। তাঁর মতে, ওই সময় বাংলাদেশে যেভাবে বয়স্ক মানুষ, নারী, শিক্ষার্থী ও যুবকদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, সেখানে শেখ হাসিনার ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি মনে করেন, সঠিক পদক্ষেপ নিলে বহু প্রাণহানি এড়ানো যেত। তাই প্রধানমন্ত্রীর দায়ভার তাঁকে নিতেই হবে।
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনা চাইলে ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে পারতেন, কিন্তু তিনি ক্ষমতা রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেন। তার মতে, আইনের কাছে সবাই সমান এবং আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই রায় দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের রাজ্য সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, সংগঠনটি মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে, তাই শাস্তির ধরনকে তারা সমর্থন করছে না। তবে তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি, খুন-সন্ত্রাস এবং দমন-পীড়নের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, এবং জুলাই বিপ্লবের পর তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ওঠে, তার ভিত্তিতে কঠোর শাস্তি প্রত্যাশিতই ছিল। তবুও তিনি মনে করেন, নির্বাচনের আগে তাড়াহুড়ো করে রায় ঘোষণা করায় আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। তাঁর মতে, রায়টিতে রাজনৈতিক প্রভাবের ছায়া রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভারত সরকার স্পষ্টভাবে জানানো উচিত শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন কি না। তাঁর প্রত্যর্পণ বা অন্য কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের জানার অধিকার রয়েছে।
এদিকে ভারতের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে থাকা অনেক বাংলাদেশি নাগরিক রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও, ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগপন্থী নেতাকর্মীরা তা সমর্থন করেননি। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিও রায়কে সমর্থন না করে বাংলাদেশের সরকার ও বিচারব্যবস্থাকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছে।