সম্প্রতি ইসকন সদস্য অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে প্রচারিত ভিডিওটি ইসকন সদস্যের নয়,অস্ত্র চালানোর ভিডিওটি কথিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ইসকনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে সময় সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করে ইসকনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটিতে অস্ত্র চালানো ব্যক্তি কোনো ইসকন সদস্য নয় বরং, কথিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর অস্ত্র চালনার পুরোনো একটি ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। থাইল্যান্ড ভিত্তিক গণমাধ্যম থাইরাথ টিভির ফেসবুক পেজে গত ২ অক্টোবরে ‘แบบนี้ก็ได้หรอ! หลวงพี่โชว์ความแม่น ลั่นไกสนั่นป่า’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্যতা লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটিতে তাকে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মর্মে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, থাইল্যান্ড ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম থাই পিবিএস এর ওয়েবসাইটে গত ৩ অক্টোবরে “The Buddhist Office has ordered the search for the “monk who practiced shooting a gun”, indicating inappropriate behavior. (স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাষান্তরিত)” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সংবাদ প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত ভিডিওটির স্ক্রিনশটের সংযুক্তিসহ বলা হয়, বৌদ্ধ অফিস থেকে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে একটি তদন্ত করা হচ্ছে। ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তি যদি কোনো বৌদ্ধ মন্দির বা মঠের সন্ন্যাসী হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে সতর্ক করার জন্য মঠাধ্যক্ষকে জানানো হবে। ওই ব্যক্তির এরূপ কার্যক্রম একজন সন্ন্যাসীর ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত এবং এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসে সংকট তৈরি করেছে। তবে, তদন্তটির ফলাফল সম্পর্কে জানা যায়নি।
তাছাড়া ভিডিওটি গত ১ অক্টোবর থেকেই অনলাইনে বিদ্যমান আছে। অপরদিকে গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। অর্থাৎ, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আটক হওয়ার আগে থেকেই প্রচারিত ভিডিওটি অনলাইনে বিদ্যমান আছে।
একই বিষয়ে থাই মিডিয়া আউটলেট খাওসোড অনলাইনে গত ১ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত দৃশ্যের স্ক্রিনশটের সংযুক্তিও পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ১ অক্টোবরে ফেসবুকে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে যেখানে একজন ব্যক্তি সন্ন্যাসীর বেশে গুলি করছেন। তবে, ভিডিওটির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সুতরাং, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ঘটনায় ইসকন সদস্য অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে দাবিতে কথিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর গুলি চালনার পুরোনো একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।