রাইজিংসিলেট- সিলেটে নারী খেলোয়াড়ের মরদেহ উদ্ধার, স্বামী আটক,শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে সিল ভ্যালি ক্যাসল নামের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ঝুলন্ত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সিলেট নগরের তেলিহাওর এলাকা থেকে ফারজানা মিলি (২৫) নামে তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরি হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামীকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনলাইনে জুয়া ও স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
নিহত মিলি সুনামগঞ্জের জগ্ননাথপুরের সদর ইউনিয়নের মৃত সিরাজুল হকের মেয়ে। তিনি দিরাই উপজেলার কালিয়ারখাপন গ্রামের আসকর আলীর ছেলে নুর আলমের (৩২) স্ত্রী। জেলা পর্যায়ের সাবেক নারী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় তিনি।
পুলিশ জানায়, সকালে এলাকাবাসী সূত্রে জানতে পেরে তারা ঘরের তালা ভেঙে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য সিলেটের এমএজি ওসমানী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও মিলির পারিবারিক সূত্র জানায়, তেলিহাওর এলাকার সিল ভ্যালি ক্যাসলের তৃতীয় তলার এ-২ ইউনিটে মিলি ও মিলির বড় বোন রেহানা হক সুহেলি তাদের স্বামী নিয়ে ভাড়া থাকেন। শুক্রবার রাতে মিলি না খেয়েই তার শয়নকক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে তার স্বামী একই বাসায় থাকলেও ঘুমান ভিন্ন কক্ষে। শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্তও মিলির কক্ষের দরজা লাগানো দেখে পরিবারের সদস্যরা ডাকাডাকি করেও তার সাড়াশব্দ না পেয়ে এক পর্যায়ে একটি থাই গ্লাসের দরজা এবং কক্ষের মূল দরজা ভেঙে মিলিকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখতে পান।
এসময় পরিবারের সদস্যরা কোতোয়ালি থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এসময় পুলিশ মিলির স্বামী নুর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
নিহতের ভাই সাংবাদিক এনামুলনহক রেনু ও আমিনুল হক সিপনেরও অভিযোগ, মিলিকে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে।
মিলির বড় বোন রেহানা হক জানান, সাড়ে ৪ বছর আগে নুর আলমের সঙ্গে মিলির বিয়ে হয়। এরপর থেকে রেহানা ও মিলি তাদের স্বামী নিয়ে সিল ভ্যালি ক্যাসলের ওই বাসায় ভাড়া থাকেন। কিন্তু মিলির স্বামী দৃশ্যমান কোনো চাকরি বা পেশায় জড়িত ছিলেন না। উল্টো অনলাইন জুয়া খেলে লাখ লাখ টাকা উড়িয়েছেন। এমনকি নিজের একটি ঘর বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা এক দিনেই জুয়া খেলায় খুইয়েছেন আলম। এসব বিষয় নিয়ে মিলি ও তার স্বামীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। অনেক সময় স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হতেন মিলি। এর আগেও স্বামীর হাতে নির্যাতিত হয়ে একসঙ্গে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নিহতের স্বামী নুর আলমের দাবি, মিলি রাগি ছিলেন। সামান্য রাগ করলেও ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতেন। বৃহস্পতিবার রাতেও ঠিক একইভাবে রাগ করে দরজা বন্ধ করেন মিলি।
জুয়া নয় পেশা হিসেবে অনলাইনে ডলার কেনা-বেচা করতেন তিনি। এজন্য বাড়ি বিক্রি করে টাকা ব্যবহার করেছেন। স্ত্রীর কাছ থেকে বা তার ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উঠাননি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুদ্বীপ দাস জানান, ওই গৃহবধূর স্বামীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬ বার পড়া হয়েছে।